হৃদরোগে জন্ম নেয়া নবজাতকের চিকিৎসায় “Afjal Vibration and frequency system” এর অবিশ্বাস্য ফলাফল।
ডাঃ ওয়াই এ আরিফ: গত ১৪ ই মে রোজ টিভি অনলাইনে ফ্রী স্বাস্থ্য পরামর্শ দেবার সময় ইডিনা ইতি টাইম লাইন থেকে একটি কোমেন্টে নবজাতক শিশুর অসুস্থতার কথা বলে একটি সাহায্য চাওয়া হয়। তখন নবজাতকের বয়স ৯ দিন। আমার মোবাইলে তারা যোগাযোগ করে। শিশুটির প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ময়মনসিংহ কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। একটা মুহুর্ত তাকে অক্সিজেন ছাড়া রাখা যাচ্ছিল না। তার খালা ওর কয়েকটি ভিডিও ও ছবি আমার ইমোতে পাঠিয়ে দেয়। শিশুটিকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। তারপরও ক্রমাগত শ্বাসকষ্টে তার বুক হাঁপরের ন্যায় ওঠানামা করছিল। হসপিটালের চিকিৎসকরা তার কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ বা জন্মগতভাবে হৃদপিণ্ডের অসুখ বলে রোগ নির্নয় করেন। এর সাথে তার হার্ট ফেইলিউর উল্লেখ করে তাদের নিরাশ করেন। আমাকে তার খালা মোবাইলে জানতে চায় তারা কি করবে? আমি তাদের বলি যেহেতু বাড়ি গেলে অক্সিজেন দিতে পারবেননা তাই অন্তত সপ্তাহ খানেক হসপিটালে থাকুন। আমি ওষুধ মেসেঞ্জারে লিখে দিবো। হোমিও ওষুধ নিয়ে এসে খাওয়ান।
তার থেকে লক্ষন নিয়ে পেলাম -
অক্সিজেন খুললেই মুখমণ্ডল নিলাভ হয়ে যায়। প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে মনেহয় দম এখনি বেরিয়ে যাবে ও বুকের মধ্যে ঘড় ঘড় শব্দ হতে থাকে।
উপরোক্ত লক্ষন বিবেচনায় এন্টিম টার্ট ৩০ দিনে দুবার করে তিনদিন ওষুধটি সেবন করতে বল্লাম। পরদিন ওর খালা জানালো গতরাতে স্বভাবিক শিশুর মত ঘুমিয়েছে। কান্নাকাটি করেনি। তবে অক্সিজেন খোলা যাচ্ছে না। আমি তাকে আস্বস্ত করে বল্লাম অপেক্ষা করুন। আশাকরি ঠিক হয়ে যাবে। এর পরদিন আরো উন্নতির কথা জানায়। ৫ দিনের মাথায় তার অক্সিজেন খুলে দিলো। এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ইকো করেও স্বভাবিক রিপোর্ট পেল। স্রস্টার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার হৃদয় মস্তক অবনত হয়ে গেলো। চিকিৎসকরা যার বাঁচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলো সে কিনা অক্সিজেন ছাড়াই স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছে। স্রস্টার কত অপার মহিমা।
কিন্তু আরেক বিপত্তি এসে দেখা দেয়। যা এই গল্পের সবচেয়ে ক্রিটিকাল পার্ট ও আজকের আলোচনার সেই আশ্চর্য চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়টি টেনে আনছে। তাই এখন বলছি।
অক্সিজেন দেবার সময় গালের উপর যেখানে টেপ লাগিয়ে অক্সিজেন টিউব আটকে দিয়েছিলো সেখানে ক্ষত দেখা দেয়। প্রথমে স্বাভাবিক ক্ষতই ছিলো। ক্ষত আস্তে আস্তে ক্ষত বাড়তে থাকে। নেভানল পাউডার দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে ওকে ব্লাড দেয়া হলো যাতে ইনফেকশন শুকিয়ে যায়। কিন্তু কাজ হলো না। যেহেতু আর অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছিল না তাই তারা হসপিটালে থেকে গত ২৩ মে রিলিজ নিয়ে নেয় ।
আমার সাথে যোগাযোগ করলে ওর মায়াজমেটিক দিক, ঘায়ের পার্শ বৃদ্বি ও চর্বি মাখা চিত্র দেখে মার্কসল ৩০ প্রেসক্রিপশন করলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য জনিত যেখানে ওষুধ নিতে যায় সেখান থেকে একাধিক ওষুধ যুক্ত করে দেয়। ফলে ঘা বেড়ে ভয়ানক আকার ধারণ করে। গালের ঘা বেড়ে মুখমন্ডলের মাড়ি বেড়িয়ে আসে। আমি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লাম। এখন তার জীবন সংশয় দেখা দিয়েছে। এতোদূর এগিয়ে এসে এখন থেকে হেরে যাবো। মেনে নিতে পারছিনা। কি করবো বুঝতে পারছি না। মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কেমন একটা মায়া তাড়া করছে আমাকে। অজানা অচেনা আত্মীয়র কোন বন্ধন নেই। তারপরও একটা ভালোবাসার টান আমাকে অস্থির করে তুল্ল। যে করেই হোক তাকে বাঁচাতে হবে।
স্রস্টার নিকট প্রার্থনা করলাম। হঠাৎ আফজাল ভাইয়ের কথা মনে হলো। সংগে সংগে তাকে কল দিলাম। তাকে কল দেবার পেছনে দুটি কারন ছিলো-
এক- তার সংগে কেসটি নিয়ে আলোচনা করতে পারবো।
দুই - তার নব আবিস্কৃত ভাইব্রেশন সিস্টেমকে এক্ষেত্রে ব্যাবহার করা। যেহেতু প্রেসক্রিপশন করলে ফার্মাসি থেকে সঠিক ডোজ দিচ্ছে না। তাই এই ক্রিটিকাল জায়গা থেকে আর রিস্ক নেয়া যায়না।
সে যাইহোক তাকে কল দিয়ে না পেয়ে আনোয়ার পাটোয়ারী ভাইকে কল দিলাম। যিনি তার এই গবেষণার একজন সদস্য। জানতে পারলাম আফজাল ভাই গ্রামে। তাই হয়তো ব্যাস্ততার কারনে মোবাইল কল রিসিভ করেননি। তাই বিস্তারিত আনোয়ার ভাইকে বলে ঐ শিশুটিকে আমরা ইমোতে গ্রুপ করে দেখবো বলে জানালাম। তিনিও আমার সাথে একমত হলেন। আমি বার বার আফজাল ভাইকে রিং দিচ্ছিলাম। চিন্তা করছিলাম উনি বিরক্ত হলে হোক। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচাতে হবে। এরপর ওনাকে বিস্তারিত বলে রাত ৮ টায় আমরা ভাইব্রেশন গ্রুপে ঐ শিশুকে দেখবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি গ্রুপের নাম ভাইব্রেশন দিলাম। কারন আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছি তাকে দূর থেকে আফজাল ভাইয়ের আবিস্কৃত ভাইব্রেশন সিস্টেমে ওষুধ প্রয়োগ করবো।
যে জন্য শুধু শিশুটির ছবি নিলেই হবে। অধিকন্তু জানিয়ে রাখি এই প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই। যদিও দুটি কেসে এই প্রায়াগিক ব্যাবহারে আমি পজেটিভ রেজাল্ট দেখেছিলাম ডাঃ আনোয়ার পাটোয়ারী ভাইয়ের ছেলের পুড়ে যাবার কেসে ও ডাঃ আফজাল ভাই রমজান মাসে আমার মিসেসের মাথা ব্যথায় ন্যট্রাম প্রয়োগ করেছিলেন এই পদ্ধতিতে। যেখানে আমি পজেটিভ রেজাল্ট দেখেছিলাম। তো আমরা ২৯ শে মে রাত ৮.৩০ মিনিটে ইমোতে ভাইব্রেশন গ্রুপে আনোয়ার ও আফজাল ভাইকে নিয়ে শিশুটিকে ভিডিও কলে দেখলাম।
অদ্ভুত বিষয় ছিলো এতো মারাত্মক ক্ষত সত্বেও শিশুটির অসুস্থতার কোন প্রতিক্রিয়া ছিলোনা। কান্নাকাটি বা খাওয়া দাওয়া ও ঘুমে কোন ব্যাঘাত ছিলোনা। অপরদিকে ক্ষত দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে। এর সাথে জন্মগত হার্ট ডিজিজ বিবেচনা করে আমরা বংশগত সিফিলিটিক মায়াজম ও তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আমরা তিনটি ওষুধ ফসফরাস, ওপিয়াম ও সিফিলিনামকে ডিডি করে সিফিলিনাম ৩০ নির্ধারণ করলাম।
এখন প্রয়োগ কিভাবে করবো? এ নিয়ে আলোচনা করলাম। আফজাল ভাইকে বল্লাম আপনার ভাইব্রেশন সিস্টেমে প্রয়োগ করা যায় কিনা। তিনি নির্ভরতার সাথে সম্মতি জানালেন। কিন্তু প্রশ্ন দেখাদিলো রোগীর অভিভাবক এটাকে কিভাবে নেবে। যেখানে হসপিটাল থেকে সার্জারি করতে বলেছে এবং আমার সাথে পরামর্শ করে সার্জারি না করিয়ে বাসায় নিয়ে এসেছে সেখানে দূর থেকে ওষুধ প্রয়োগ তাদের কি করে বোধগম্য হবে। যদিও তাদের সাথে আমাদের কোন স্বার্থ বা টাকা পয়সার বিষয় জড়িত নয়। যদি স্বার্থ জড়িত থাকে তবে যদি স্রস্টা খুশি হয়ে পুরস্কৃত করেন। এতটুকুই। সে যাইহোক রোগীর খালাকে আমি সংক্ষেপে বুঝিয়ে বল্লাম। দূর থেকে যেমন মোবাইলে কথা বলছি তেমনি দূর থেকে ওষুধ প্রয়োগ করবো। আপনাদের কিছুই করতে হবেনা। মনেহয় আমাদের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা দেখে তাদের মনে আস্হা জন্মেছিল। তাই তারা পরামর্শ করে আমাকে জানালো " ওর যা ভালো হয় তাই করুন স্যার, আপনি যা খুশি তাই ব্যাবস্হা নিতে পারেন।" আমি বল্লাম যদি কোন বিপদ হয়ে যায়। সে বল্ল তাতে আমাদের কোন দাবি থাকবেনা। এর পর কিছুটা আস্বস্ত হয়ে আফজাল ভাইকে সিফিলিনাম ৩০ তার ভাইব্রেশন সিস্টেমে প্রয়োগ করতে বল্লাম।
পরদিন অর্থাৎ ৩০ মে ওর খালামনি, ইতি কল দিয়ে জানালো যে ওর ওখান থেকে হালকা ডিসচার্জ হচ্ছে। আমি একথা শুনে আফজাল ভাইকে কল দিয়ে জানতে চাইলাম কখন ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। তিনি বললেন আজ ভোরে। তাতে আমি আস্বস্ত হলাম যে ভাইব্রেশন সিস্টেমে ওষুধ প্রয়োগ তার উপর পজেটিভ রেসপন্স করেছে। ভেতর ভেতর আমি একধরনের উত্তেজনা অনুভব করলাম। অপেক্ষায় থাকলাম। পরদিন জানলাম ক্ষত ধার থেকে কিছুটা টান ধরেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আবার আশার আলো দেখছি।
![]() |
রাইসা এর বর্তমান ছবি। |
গত ২৪ মে ২০২০ থেকে ২৪ জুন ২০২০। ১ মাসে রোগীর এই উন্নতি । পরবর্তী আপডেট জানাবো ইনশাআল্লাহ। সবাই শিশুটির জন্য দোয়া করবেন।
বিঃদ্রঃ “Afjal Vibration and frequency system” এর প্রয়োগ পদ্ধতি বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। আমি শুধু মাত্র এর ফলটা পেয়েছি। মেডিসিন নির্বাচনে সম্পূর্ণ হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতি ফলো করলেও দূর থেকে প্রয়োগ পদ্ধতি ভাইব্রেশন সিস্টেমের। এ নিয়ে ডাঃ আফজাল ভাই গবেষণা করছেন। আশাকরি আধুনিক বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা এক অত্যাচর্য আবিষ্কার হবে। এবং মানব কল্যানে ওষুধ প্রয়োগ পদ্ধতিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশেষ করে বর্তমান পৃথিবীর প্যানডেমিক করোনা চিকিৎসায় এটা এখন সময়ের চাহিদা। সফল হোক তার গবেষণা। জয় হোক হোমিওপ্যাথির।
মেডিকেল অফিসার, সরকারী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
অর্গানাইজিং সেক্রেটারি , হোমিওপ্যাথিক কল্যান সোসাইটি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন