আঙ্গুরের পুষ্টি ও ঔষধি গুণ
![]() |
আঙ্গুর |
সে (পানি) দ্বারা তিনি তোমাদের জন্যে শস্য উৎপাদন করেন- যায়তুন, খেজুর ও আংগুর (সহ) সব ধরনের ফল (জন্মান), অবশ্যই এর মাঝে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে (অনেক) নিদর্শন রয়েছে। (সূরা আন্-নহল, আয়াত:১১)
আঙ্গুর কুরআনে বর্ণিত ফল সমূহের মধ্যে একটি। একই থোকায় ৬ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত উৎপন্ন হয় ।আঙ্গুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। এগুলির মধ্যে রয়েছে বি১, সি, কে ভিটামিন। এছাড়াও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম ও খনিজ পদার্থ ম্যাঙ্গানিস। আঙ্গুর শুকিয়ে সাধারণত তৈরি হয় কিশমিশ এবং কিশমিশে রয়েছে ১০ শতাংশ ফ্রুকটোজ।
আঙুর কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।আঙুরের বীজ ও খোসায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা বার্ধক্য রোধে কাজ করে। শুধু তাই নয়, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালিগুলোকে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে। যাঁরা রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতায় ভোগেন, তাঁদের জন্য আঙুরের জুস খুবই উপকারী। আঙুরের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনে সহায়ক ও ইনসুলিন বৃদ্ধি করে। আঙুরের জুসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামিটরির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রদাহ দূর করে। এই প্রদাহ ক্যানসার রোগ সৃষ্টির প্রধান কারণ হতে পারে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়রিয়া, ত্বক ও মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতেও আঙুর সহায়তা করে।
১. ক্যানসার নিরাময়ে:
আঙ্গুর সাধারণত আমরা জুস করে খেয়ে থাকি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফামিটরির মতাে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে আঙ্গুরের এই জুসে, যা আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রদাহ দূর করে থাকে। সাধারণত এই প্রদাহ ক্যান্সার রােগ জন্মের অন্যতম প্রধান কারণ।
২. ত্বককে সুরক্ষিত রাখে:
আঙ্গুরে মধ্যে থাকা ফাইটো কেমিক্যাল ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট আমাদের দ্বকের সুরক্ষায় বিশেষ কাজ করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এটি আমাদের দ্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৩. বয়সের ছাপে বাধা:
আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেলস ত্বকে বলিরেখা ফেলে দেয়। আঙ্গুরে মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমাদের ত্বক ঠিক রাখে এবং শরীরে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরােধ করে।
৪. কিডনি ভাল রাখতে:
আঙ্গুরের সব ভিটামিন উপাদানগুলাে ক্ষতিকারক ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা সহনশীল অবস্থায় রাখে। সেই সঙ্গে আমাদের কিডনির রােগ-ব্যাধির বিরুদ্ধেও কাজ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
৫. নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন:
সাধারণত যারা রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতায় ভােগেন বিশেষ করে তাদের জন্য আঙ্গুরের জুস খুবই উপকারী। আঙ্গুরে মধ্যে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস,যা আমাদের শরীরে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনে সহায়ক ও ইনসুলিন বৃদ্ধি করে থাকে।
৬. ভুলে যাওয়া রােগ নিরাময়:
আমরা অনেকেই ছােট ছােট বিষয়গুলাে খুব দ্রুত ভুলে যায়। আবার দেখা যায় কোনাে কথা বেমালুম স্মৃতি থেকে মুছে যায়। এটি সত্যিকার অর্থে এক ধরনের রােগ। এই ভুলে যাওয়া রােগটি নিরাময়ে আঙ্গুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৭. স্তন ক্যান্সার নির্মূল:
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন যেসব নারীরা তারা নিয়মিত খেতে পারেন আঙ্গুর। কেননা গবেষণায় দেখা গেছে আঙ্গুরের উপাদানগুলাে স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী
কোষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পুরােপুরি সক্ষম।
৮. চুলের যত্নে:
চুলের একটু অযত্নেই আমাদের চুল খুশকিতে
ভরে যায় এমন অনেকেই আছেন। এছাড়াও দেখা যায় চুলের আগা ফেটে গিয়ে রুক্ষ হয়ে পড়ে, ধূসর রঙের হয়ে যায় এবং শেষমেশ চুল ঝরতে থাকে। এইসব সমস্যার সমাধানে আপনি আঙ্গুর খেতে পারেন।
৯. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে:
আঙ্গুরে সাধারণত টরােস্টেলবেন নামে এক ধরনের যৌগ থাকে, যা আমাদের শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
১০. শরীরের হাড় শক্ত করে:
আঙ্গুরে আছে প্রচুর পরিমাণে তামা, লােহা ও ম্যাংগানিজের মতাে খনিজ পদার্থ থাকে, যা আমাদের শরীরের হাড়ের গঠন ও হাড় শক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
১১. মাথাব্যথা দূর করতে:
হঠাৎ করে মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেলে ঔষধ না খেয়ে আঙ্গুর খেলে আরাম বোধ হয়। এছাড়া আঙ্গুর আমাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রােধ করে।
১২. চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায়:
আমাদের চোখ ভালাে রাখতে আঙ্গুর অনেক বেশি কার্যকর। বয়সজনিত সমস্যার কারণে যারা চোখের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী এই ফল।
১৩. অ্যাজমা প্রতিরােধ করতে আঙ্গুর:
আঙ্গুরের ঔষধি গুনাগুন অনেক। আঙ্গুরের এই ঔষধি গুণের কারণে এটি অ্যাজমার ঝুকি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে এবং আমাদের শরীরে ফুসফুসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ায়।
১৪. বদহজম দূর করতে:
যদি নিয়মিত আঙ্গুর খাওয়া হয় তাহলে বদহজম অনেকাংশে দূর হয়। অগ্নিমন্দ্যা দূর করতেও আঙ্গুর অনেক বেশি কার্যকর।
সতর্কতা :
অতিরিক্ত আঙুর খেলে হজমের সমস্যা হয়। আবার এর ফলে ডায়রিয়ার সমস্যাও হতে পারে। পাকা আঙুর ও শুকনো আঙুর দুটিতেই হয়। আঙুরের একটি কমন সাইড ইফেক্ট।
আঙুরে থাকা ফ্রুকটোজ উপাদানটি সহজে হজম হয় না, ফলে পেটে ও ব্যাথা গ্যাসের সৃষ্টি করে।
আঙুরে অতিরিক্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেড থাকে।
কার্বোহাইড্রেড আমাদের প্রতিদিন দরকার। কিন্তু অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেড গ্লুকোজে পরিনত হয় এবং এই অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরের জন্য ভালো না। এর ফলেই সুগারের মত সমস্যা হয়। বেঁচে থাকার জন্য সব উপাদানই দরকার কিন্তু সবটাই পরিমিত হওয়া উচিৎ।
তথ্যসূত্র : প্রাগুক্ত
Dr. Imam Hossain
(Homeopathic Consultant)
(Research Fellow, Afjal vibration & Frequency system
(Homeopathic Consultant)
(Research Fellow, Afjal vibration & Frequency system
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন